অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনায় মৃত্যু নাড়িয়ে দেয় বিবেককে। আগুন লাগার কারণ কি? কোন ধরনের আগুন কিভাবে নেভাতে হয়? হঠাৎ আগুন লাগলে কিভাবে বের হবেন? কালো ধোয়া থেকে বের হবার কৌশল কি? অসাবধানতা আর অনিয়মের কারণে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে গত এক দশকে। অনুমোদনহীন বিল্ডিং, অসাবধানতা আর অনিয়মে ঝড়ে যায় অসংখ্য তাজা প্রাণ। নিমতলীর আগুন, বঙ্গবাজারের আগুন, বেইলী রোডে ঘটে যাওয়া অগ্নি দুর্ঘটনা যেনো ধ্বংসস্তুপ আর হাহাকারের জ্বলন্ত দলিল। কেনো হচ্ছে এতো অগ্নি দুর্ঘটনা? আগুণ লাগলে মানুষ দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে প্রাণ বাচানোর তাড়নায়। কিন্ত বেশিরভাগ মানুষই জানেনা আগুন লাগলে করনীয় কি আর কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিভাবে ব্যবহার করবেন জানেন কি? আগুনের ভয়াবহতা বেশি হলে পানি দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। জেনে নিন আগুন লাগার কারণ, করনীয়, ও বর্জনীয়, এবং অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার।
আগুন লাগার কারণ কি?
আগুন লাগার অন্যতম কারন অনিয়ম আর অসাবধানতা। ছোট ভুলের কারণে হতে পারে মারাত্মক পরিণাম। আগুন বিভিন্ন কারণে লাগতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিগারেটের আগুন, গ্যাসের আগুন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে আগুন, এবং ব্রার্স্ট হওয়া থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকে। ছোট ফুলকি থেকে তা রূপ নিতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। যথাযথ বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা অর্থাৎ ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া থেকে বেশি মৃত্যু হয় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কিংবা বিষাক্ত ধোয়ায় শ্বাসনালী পুড়ে গেলে। আধুনিকতার ছোয়া আনতে গ্লাস সিস্টেম বিল্ডিং নির্মাণ করে তাতে বিভিন্ন নামীদামী পোশাকের দোকান এবং রেস্তোরা গড়ে উঠলেও সেখানে ভেন্টিলেশন বা ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট বা সিড়ি থাকে না। ফলে ঝুকিতে থাকে এই ভবনগুলো।
কোন ধরনের আগুন কিভাবে নেভাবেন?
সব ধরনের আগুন পানি দিয়ে নেভানো সম্ভব না। কাপড় কিংবা কাগজ পুড়ে আগুন লাগলে তা পানি দিয়ে নেভানো সম্ভব। কিন্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে, তেল বা গ্যাস থেকে আগুন লাগলে তা পানি দিয়ে নেভানো সম্ভব না। এসব ক্ষেত্রে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র, শুকনো বালি, ভেজানো কম্বল ইত্যাদি ভালো কাজ করে। এছাড়াও জরুরি মুহুর্তে আগুনের পরিমাণ বেশি হলে তা নেভাতে গিয়ে সময় নষ্ট না করে বের হওয়ার উপায় খোজা উচিত। মেইন সুইচ এবং গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দেয়াও জরুরি।
হঠাৎ আগুন লাগলে কিভাবে বের হবেন?
চলুন জেনে নেই আগুন থেকে বের হবার উপায়ঃ
- নিচের দিকে ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি নিচে নামা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ছাদের দিকে যেতে হবে।
- ধোয়া প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। রুমাল বা কাপড় দিয়ে যথাসম্ভব নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে যাতে ধোয়া ঢুকতে না পারে।
- হেটে বা দৌড়াদৌড়ি করে নয় বরং নাক মুখ রুমালে চেপে হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করুন। ধোয়ার বৈশিষ্ট্যই যে তা উপরের দিকে থাকে। তাই ধোয়া ওপরে থাকলে নিচের দিকে অক্সিজেন থাকে।
- যথাসম্ভব খোলা জায়গা যেমন বেলকুনি, জানালা, বা ছাদ এসব জায়গায় আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করুন। ফায়ার সার্ভিসের নাম্বার সংরক্ষণে রাখুন এবং ৯৯৯ এ কল দিয়ে জরুরি অবস্থা অবগত করুন।
- আগুনের পরিমান কম থাকলে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তা নেভানোর চেষ্টা করুন।
- গায়ে আগুন লাগলে দৌড় দেয়া যাবেনা। মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে আগুন নেভান।
- সিলিন্ডারে আগুন লাগলে সুইচ অফ করে দিন এবং কম্বল ভিজিয়ে আগুনের ওপর দিন।
- সাহস ও মনোবল রাখুন।
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারের উপায় কি?
- হালকা ওজনের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র হতে হবে।
- যন্ত্রটির হাতল ধরুন এবং টেনে ধরুন।
- লক্ষ্য স্থির করুন এবং আগুনের দিকে ধরুন।
- হাতলে চাপ দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন।
- একইদিকে বারবার স্প্রে না করে চারদিকে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে স্প্রে করুন।
- আগুন নেভানোর আয়তায় না থাকলে দ্রুত স্থান পরিত্যাগের চেষ্টা করুন এবং বের হবার চেষ্টা করুন।
আগুন লাগলে কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
- বিচলিত হয়ে প্যানিক করা যাবে না। মাথা ঠান্ডা রাখুন।
- দৌড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। হামাগুড়ি দিয়ে চলুন।
- কোনো অবস্থাতেই মনোবল হারিয়ে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।
- ধোয়া নাকে মুখে ঢুকতে দেয়া যাবে না।
- উচু বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়া যাবে না।
- তারে ঝুলে নামা যাবে না।
আগুন লাগলে মাথা ঠান্ডা রেখে বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করতে হবে। সাহস রাখতে হবে আর কোনোভাবে সাহায্য পাওয়া যায় কিনা সেই চেষ্টা করতে হবে। সতর্কতা, সাবধানতা, আর সচেতনতায় বাচতে পারে অসংখ্য জীবন। আসুন অগ্নিদুর্ঘটনার ব্যাপারে সচেতন হই এবং আবদ্ধ ভবনগুলো এড়িয়ে চলি।