ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত?ইফতারে ভুলেও খাবেননা এই ৫ খাবার

ইফতার মানেই বাঙালির এলাহি আয়োজন। বাসার কিচেন থেকে রাস্তার মোড় সব জায়গাতেই হরেক রকম ইফতার দেখতে পাওয়া যায়। বাহারী আয়োজনে থাকে নানান মুখরোচক খাবার। কিন্ত আদৌ সেগুলো পুষ্টিকর তো? ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত? ইফতার মেন্যুতে কি কি খাবার থাকা উচিত আর কি কি এড়িয়ে চলা উচিত? চলুন আজ জেনে নেয়া যাক ইফতারের খাবার কেমন হলে ভালো হয়? কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত? ইফতারের মুখরোচক খাবারগুলো হচ্ছে নাতো আপনার স্বাস্থ্যঝুকির কারণ? পুষ্টিকর ইফতার কোনগুলো? ইফতার মানেই ভোজনরসিক বাঙালির টেবিলভর্তি খাবারের বাহারী আয়োজন থাকা চাই-ই চাই। ঝাল কিংবা মিষ্টি কোনো পদেই থাকেনা কমতি। কিন্ত সারাদিন না খেয়ে মুখরোচক খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নাকি খারাপ? সারাদিন রোজা রেখে শরীর হয়ে পড়ে ক্লান্ত ও পানিশূণ্য। তাই ইফতারের খাবার মেন্যুতে পানির অভাব পূরণ করবে ও শক্তি যোগাবে এমন খাবার রাখা আবশ্যক।

ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত?

ইফতার মানে ভাজা-পোড়া তৈলাক্ত খাবারের বাহার। সেইসাথে থাকে মিষ্টি, বুন্দিয়া, জিলাপি ইত্যাদি মিষ্টান্ন। শরবতের ক্ষেত্রে বাঙালি বেছে নেয় রুহ আফজা বা অরেঞ্জ ফ্লেভারের কৃত্রিম ফ্লেভার দেয়া পানীয়। সেইসাথে শরবতে মিশ্রিত হয় ইসুবগুলের ভুসি কিংবা তোকমা দানা। তৈলাক্ত পিয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ, মাংসের কাবাব দিয়ে মুড়ি মাখা খেতেও মিস করে না বেশিরভাগ মানুষ। কিন্ত সারাদিন না খেয়ে থাকার পর এসব খেয়ে নিজেরাই করছে নিজেদের মারাত্মক ক্ষতি। চলুন জেনে নেই পুষ্টিকর ইফতারের খাবার কোনগুলোঃ

ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত
  • পানিঃ 

সারাদিন রোজা রেখে শরীরে তৈরী হয় পানিঘাটতি। তাই পানির চাহিদা পূরণে ইফতারে পানি খেতে হবে। তবে চেষ্টা করবেন ফ্রিজের ঠান্ডা পানি না খেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি খাওয়ার। একসাথে অতিরিক্ত পরিমানে পানি খাওয়া যাবে না। কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে খেতে হবে।

  • শরবতঃ 

শরবত মানেই বাজার থেকে কিনে আনা আর্টিফিসিয়াল শরবত না। বাড়িতে বানানো লেবুর শরবত, বেলের শরবত বা দই দিয়ে ঘোল তৈরী করে খেতে পারেন। এতে পানিশূন্যতা কমবে সেইসাথে শক্তি পাবেন।

  • টাটকা ফলঃ 

ইফতার মেন্যুতে খেজুর, তরমুজ, কলা, আপেল, কমলা, ইত্যাদি ফল রাখতে পারেন। খেজুর শক্তি বাড়াতে দারূন সাহায্য করে। তরমুজ পানিশূণ্যতা দূর করে। কলা শক্তি বাড়ায় ও আয়রণের চাহিদা পূরণ করে। আপেল ও কমলা ভিটামিন সি এর উৎস এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

  • শসা ও গাজরঃ  

ইফতারে খেতে পারেন শসা এবং গাজর। শসা পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। গাজর শক্তি বাড়ায় ও পুষ্টির যোগান দেয়।

  • ডিমঃ 

ইফতার মেন্যুতে রাখতে পারেন ডিম। এটি প্রোটিন ঘাটতি মেটায়, শক্তি বাড়ায়, এবং পুষ্টি যোগায়।

  • দইঃ 

ইফতার মেন্যুতে রাখতে পারেন দই। দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া হজমে দারূন সাহায্য করে।

ইফতারে ভুলেও এই ৫ টি খাবার খাবেন না

ইফতারে ভুলেও এই ৫ টি খাবার খাবেন নাঃ

ইফতারে নানান মুখরোচক খাবার খেতে আমরা বরাবরই মুখিয়ে থাকি। কিন্ত সেই খাবারগুলোই হয়তো করে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি। চলুন জেনে নেই ইফতারে বা ইফতারের পর কোন ৫ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

  • তৈলাক্ত খাবারঃ 

ইফতারে ভাজা-পোড়া খাওয়ার আগ্রহ কমবেশি সবারই থাকে। কিন্ত সারাদিন রোজা রেখে পেটে গ্যাস বেড়ে যায়। তৈলাক্ত খাবার সেই অ্যাসিডিটি আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিদিনের ইফতার মেন্যুতে তৈলাক্ত খাবার ভুলেও রাখবেন না।

  • চা/কফিঃ 

সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়। চা কিংবা কফি সেই পানিশূন্যতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। সেইসাথে চা-কফি অ্যাসিডিটি বাড়ায়। তাই ইফতার এর সময় ভুলেও চা কিংবা কফি খাবেন না।

  • কৃত্রিম ফ্লেভারযুক্ত শরবতঃ 

বাজারে পাওয়া কৃত্রিম ফলের ফ্লেভারযুক্ত শরবতের পাউডার বা রুহ আফজাতে ফলের পুষ্টি থাকে না। এছাড়া এসব কৃত্রিম রঙ ও ফ্লেভারযুক্ত খাবার লিভারের ক্ষতি করতে পারে। এগুলোতে কখনো কখনো টেক্সটাইলের ডাই ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। 

  • রাস্তার কেনা খাবারঃ 

রমজান মাসে রাস্তার অলিগলিতে বসে বাহারী ইফতারের আয়োজন। এসব খাবার তৈরী হতে পারে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে। এছাড়াও রাস্তার ধুলাবালি সেই খাবারে মিশ্রিত হয়। এসব খাবারে ক্ষতিকর কমদামী তেল ব্যবহৃত হয় যা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। এছাড়া এসব ক্ষেত্রে বাসি-পচা খাবার মিশ্রিত থাকতে পারে।

  • দুধ/দুধজাতীয় খাবারঃ 

ইফতারে দুধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে দুধ খেলে তা হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সেই সাথে দুধ গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ইফতারে দুধ না খাওয়াই ভালো।

ইফতার হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর। পানি ঘাটতি পূরণ না করে উলটাপালটা খাবার খেলে হতে পারে বদহজম বা ডায়রিয়া। এসব রোগে পানিশূন্যতা বাড়িয়ে শরীর আরো দুর্বল করে দিতে পারে। তাই ইফতারের খাবার হোক সুষম ও শক্তিবর্ধক। মুখরোচক খাবার খেতে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আজই বিরত হোন।