আমাদের সৌন্দর্যের অনেকাংশ নির্ভর করে চুলের উপরে। কেননা ভিন্ন ভিন্ন হেয়ারস্টাইলের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন লুক পাওয়া যায়। চুলের যত্নে তেলের ব্যবহার অতি প্রাচীন। চুলকে সুন্দর , মসৃণ, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার জন্য তেল ব্যবহার করতেই হয়। তেল আপনার চুলে পুষ্টি যোগায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প আমার ছেলেবেলায় জ্বরের ওষুধ হিসেবে ক্যাস্টর অয়েল এর উল্লেখ রয়েছে। ক্যাস্টর অয়েলে ফ্য্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই, মিনারেলস, ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। মাথার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে পারে ক্যাস্টর অয়েল। চুল পড়া কমাতেও এর রয়েছে ভূমিকা। ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল চুল পড়া রোধ করার সাথে সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। এটি চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর করে এর স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে।অপরদিকে খুশকি নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকেই কাঠবাদামের তেল ব্যবহার করেন। চুলের ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে কাঠবাদামের তেল। ভিটামিন-ই ছাড়াও এই তেলের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান। যা চুলের গোড়া মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল রাখতে নিয়মিত কাঠবাদামের তেল ম্যাসাজ।

ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা
ক্যাস্টর অয়েলে আছে “Ricinoleic”। এই উপাদানের কারণেই মাথার তালুতে ভালভাবে রক্তসঞ্চালন হয় । যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা নানাবিধ। আসুন জেনে নিই ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা সম্বন্ধে-
- স্ক্যাল্পের ইনফেকশন, ইচিং বা চুলকানি রোধ করে।
- চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
- নতুন চুল গজাতেও কার্যকর।
- চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে।
- চুলের আগা ফাটা রোধ করে।
- ভ্রু পড়ে যাওয়া বন্ধ হতে বেশ উপকারী ক্যাস্টর তেল।
- নতুন ভ্রু এবং পাপড়ি গজাতেও সাহায্য করে।
- ত্বকের বলিরেখা কমাতে কাজে দেবে ক্যাস্টর তেল।
- আরথ্রাইটিস এর ব্যথা কমাতে।
- মেকাপ রিমুভার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- গোড়ালি ফেটে যাওয়া রোধেও কার্যকর।
ক্যাস্টর তেল ব্যবহারের নিয়ম
- নারকেল তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। ক্যাস্টর তেল যতটুকু নেবেন, নারকেল তেল নিবেন তার দ্বিগুণ পরিমাণ। আধা চামচ ক্যাস্টর তেলের সঙ্গে এক চামচ নারকেল তেল মেশান। এবার মিশ্রণটি একটু গরম করে তুলার সাহায্যে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। রাতে এ মিশ্রণ লাগিয়ে সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
- ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে অলিভ অয়েল ও নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন। ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে। চুল হবে মোলায়েম ও ঝলমলে।
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে তেল বের করে ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন। ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল।
- সমপরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল ও পেঁয়াজের রস মিশিয়ে চুলে লাগান। ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেঁয়াজের গন্ধ দূর করতে চাইলে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন হেয়ার প্যাকে।
ব্যবহারবিধি
- রেড়ির তেল খুব ঘন তাই এটি চুলে লাগানোর পূর্বে রেগুলার চুলের তেল (কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল) এর সাথে মিশিয়ে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
- স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা রাখতে হবে।
- তেল লাগানোর পর হেয়ার ক্যাপ অথবা হট টাওয়েল চুলে পেঁচিয়ে রাখুন।
- এরপর চুলে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
- আরও ভালো ফল চাইলে তেল লাগিয়ে পুরো রাত রেখে দিতে পারেন।

আমন্ড অয়েলের উপকারিতা
- চুলের মাস্ক হিসেবে আলমন্ড অয়েল ব্যবহার করা যায়।
- চুলকে ফ্রি-র্যাডিকেল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে।
- স্ক্যাল্প থেকে ময়লা দূর করে।
- চুলের স্ক্যাল্পের পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে
- চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় ও মজবুত করে।
- মাথায় খুশকির সমস্যা দূর করে ।
- ড্রাই ও ফ্রিজি হেয়ারের ক্ষেত্রে আলমন্ড অয়েল বালো কাজ করে।
- শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন কাঠবাদামের তেল।
- মাথার ত্বকে সংক্রমণ বা সোরিয়োসিসের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ক্যারিয়ার অয়েল হিসেবে কাঠবাদামের তেল ব্যবহার করা হয়।
আমন্ড অয়েল কীভাবে ব্যবহার করবেন?
আমন্ড অয়েল খুব সফট ধরনের। এটি সরাসরি প্রয়োগ করা যায়। অনেকেই এই তেলের সাথে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করেন। আসুন এবার জেনে নিই কীভাবে আমন্ড অয়েল ব্যবহার করবেন-
- আমন্ড অয়েল আপনি চুলে সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন।
- চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চুলের গোড়ায় আঙুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করুন।
- ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ার করতে সপ্তাহে অন্তত ২দিন চুলে আমন্ড অয়েল অ্যাপ্লাই করুন।
- চুলে যদি হিট স্টাইলিং করেন তাহলে বাসায় ফিরেই আমন্ড অয়েল দিন।
- চুল জট পাকিয়ে গেলে, তা খুলতে আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
- রাতের বেলা চুলের যত্নে আমন্ড অয়েল মাখুন।
- হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। দুই টেবিল চামচ আমন্ড অয়েলের সাথে দুই চা চামচ নারকেল তেল ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে নিন। এই মাস্ক চুলে লাগিয়ে রাখুন ৪০-৪৫ মিনিট, এরপরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
আমন্ড অয়েল ও প্রাকৃতিক উপাদানের প্যাক
দই ও আমন্ড অয়েল
টক দইয়ের সঙ্গে আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিন। পরিষ্কার ও শুকনা চুল ভাগ করে প্যাকটি লাগান ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
লেবু ও আমন্ড অয়েল
চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন আমন্ড অয়েল ও লেবুর মিশ্রণ। ৫ মিনিট অপেক্ষা করে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আমন্ড অয়েল ও ডিম
একটি ডিম ভালো করে ফেটিয়ে ২ চা চামচ আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি সম্পূর্ণ চুলে লাগান। ৪০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অলিভ অয়েল এবং আমন্ড অয়েল
সমপরিমাণ অলিভ অয়েল ও আমন্ড অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে পরদিন ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে।
মধু ও আমন্ড অয়েল
মধুর সঙ্গে খানিকটা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে।

চুল পড়া রোধ করতে ক্যাস্টর অয়েল নাকি আমন্ড অয়েল?
ক্যাস্টর কিংবা আমন্ড দুটো তেলই চুল পড়া রোধ করতে ভালো কাজ করে। তবে ক্যাস্টর অয়েল স্ক্যাল্পে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে ভালো। এটি চুলের আগায় ব্যবহারের জন্য নয়। মাথার ত্বকের জন্য উপযোগী। এছাড়া ক্যাস্টর অয়েল সরাসরি ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ক্যাস্টর অয়েলের সাথে নারকেল তেল, তিলের তেল কিংবা রোজমেরী অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। ক্যাস্টর অয়েল রেগুলার ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়। অপরদিকে আমন্ড অয়েল প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য পারফেক্ট। আমন্ড অয়েল একইসাথে স্ক্যাল্প এবং চুলের আগাতেও ব্যবহার করা যায়। যে কেউ তার চুলের ধরন বুঝে যেকোনো একটি তেল ব্যবহার করতে পারেন।
পছন্দের ক্যাস্টর এবং আমন্ড অয়েল
বাজারে না ব্র্যান্ডের ক্যাস্টর এবং আমন্ড অয়েল পাওয়া যায়। সবারই উচিত নিজেদের জন্য স্যুইটেবল প্রোডাক্ট ক্রয় করা। আসুন দেখে নিই কার্যকরী ক্যাস্টর ও আমন্ড অয়েল-