গর্ভবতী মহিলাদের যত্নে কী করণীয় ? জেনে নিন।

নারীদের জীবনে মাতৃত্ব আশীর্বাদস্বরূপ। সব নারীই চায় মাতৃত্বের স্বাদ নিতে। তবে মাতৃত্বের যাত্রাটি কিন্তু মায়ের একার নয়, তার আশেপাশের মানুষেরাও তাঁর এই সুন্দর যাত্রার অংশ। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর হাসিখুশি এবং আনন্দময় থাকা উচিত। তবে এসময়ে অনেকেই হয়ে যান ভীতসন্ত্রস্ত। বিভিন্ন ধরনের মানসিক এবং শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এ সময় প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। এজন্য দায়িত্ব নিয়ে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিতে হবে। হবু মাকেও হতে হবে সচেতন। এডিএইচডি কী? গর্ভকালীন মহিলাদের খাদ্য তালিকায় কী কী থাকা উচিত? গর্ভাবস্থায় কয়বার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত? শিশুদের মানসিক বিকাশ কী গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাদ্যের উপর নির্ভরশীল? গর্ভাবস্থায় কী খাবেন আর কী খাবেন না? গর্ভাবস্থায় মায়েদের যে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তার থেকে পরিত্রাণের উপায়, সুস্থ সবল বাচ্চার জন্য গর্ভবতী মহিলাদের ঘরোয়া যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

গর্ভবতী মহিলাদের যত্নে কী করণীয়?

গর্ভবতীদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দূর করতে আলাদা যত্নের দরকার হয়।  প্রিয়জনেরা যদি নিয়মিত যত্ন-আত্তি করে তাহলেই একজন নারীর মাতৃত্ব হয় নিরাপদ।  

  • গর্ভবতী নারীর প্রায় ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। 
  •  অন্তঃসত্ত্বা নারীকে কমপক্ষে চারবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এই চারবার হচ্ছে যথাক্রমে ১৬, ২৮, ৩২ ও ৩৬ সপ্তাহে।
  • গরমের সময় গর্ভবতী মায়েদের সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সরাসরি রোদের মধ্যে না যাওয়া ভাল।
  • গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে খাদ্য তালিকায় ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড,  জিংক, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
  • আগে টিকা দেওয়া না থাকলে গর্ভাবস্থায় পাঁচ ও ছয় মাস শেষ হলে দুটি টিটি টিকা দিতে হবে।
  • গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে যাওয়া উচিত নয়।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। 
  • প্রতিদিন গোসল করতে হবে।  
  • খাবারে অনীহা থাকলে অল্প খাবার নিয়ে বার বার খেতে হবে। 
  • ডাবের পানি কিংবা ফলের জুস খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে।
এডিএইচডি কী

এডিএইচডি কী?

এডিএইচডি-এর পূর্ণরূপ হলো “Attention Deficit Hyperactivity Disorder”। এটি একটি নিউরোডেভলপমেন্ট ডিজঅর্ডার। এডিএইচডি-তে আক্রান্ত শিশুরা স্থির থাকতে পারে না। মনোযোগের অভাব দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় কিছু গুরুট্বপূর্ণ উপাদানের অভাবে এই রোগ শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এডিএইচডি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে গর্ভাবস্থায় একজন নারীকে অবশ্যই ওমেগা-৬ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সঠিক অনুপাতে গ্রহন করতে হবে।

গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যতালিকায় কী কী থাকা উচিত

গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যতালিকায় কী কী থাকা উচিত?

গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকায় আমিষ, শর্করা, স্নেহ জাতীয় খাবারের যেন ঘাটতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া প্রচুর পরিমানে মিনারেল ও ভিটামিনও গ্রহণ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একজন নারীর ২,২০০-২,৯০০ ক্যালরি গ্রহণ করা আবশ্যক। 

  • একজন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ দুটি প্রয়োজনীয়  ফ্যাটি এসিড। 
  • গর্ভে থাকা শিশুর সুস্থ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠনে এসব ফ্যাটি অ্যাসিড কাজ করে। 
  • ডিম, কাজুবাদাম, আখরোট, সয়াবিন, স্যামন এই ফ্যাটি এসিডের ঘাটতি পূরণ করে। 
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন-ডিম, মুরগি ও হাঁসের মাংস, গরুর মাংস, শিম, বাদাম ইত্যাদি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় নিতে হবে। 
  • ফলিক এসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন- আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া সিড, শতমূলী, কমলালেবু ইত্যাদি দিতে হবে। 
  • পানিশূন্যতা দূরীকরণে গর্ভবতী মাকে সারাদিন প্রচুর পানি পান করা উচিত।
  • প্রচুর তরল জাতীয় খাবার যেমন  ডাবের পানি, ফলের জুস, লাচ্ছি, লেবু-পানি, দই ইত্যাদি দিতে হবে।
  • ডাবের পানি সকালের অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, মাংসপেশিতে টান এইসব সমস্যা দূর করে।
গর্ভাবস্থায় কী খাবেন না

গর্ভাবস্থায় কী খাবেন না

গর্ভাবস্থায় কী খেতে হবে তা যেমন জানা উচিত তেমনি কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন যে বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।

  • গর্ভাবস্থায় চা, কফি কিংবা ক্যাফেইন জাতিয় খাবার কম খেতে হবে।  
  • সামুদ্রিক মাছে পারদের আধিক্য থাকে তাই এসময় সী ফুড খাওয়া কমিয়ে দিন। মিঠা পানির মাছ খেতে হবে।
  • আধা সেদ্ধ ডিম, ডিম পোচ, আধসেদ্ধ মাছ বা মাংস খাওয়া যাবে না।
  • আনারস, কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।
  • কোনোভাবেই ধূমপান করা যাবে না। এমনকি ধূমপায়ীদের থেকে দূরে থাকতে হবে। 
  • চর্বি ও চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। 
  • অ্যালকোহল যুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • বাইরের খোলা ও বাসি খাবার না খাওয়া।
  • ফুচকা, চটপটি এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 
  • সকল ধরনের ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। পিজ্জা, বার্গার খাওয়া যাবে না।

গর্ভাবস্থায় সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত কিনা?

যেহেতু মায়ের খাদ্যাভাসের উপরই গর্ভে থাকা শিশুর পুষ্টি নির্ভর করছে , তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি কিছু সাপ্লিমেন্টও দরকার হয় । গর্ভাবস্থায় অনেক সময় খাবারে অরুচি দেখা যায়। তখন শরীরে সুষম খাদ্যের ঘাটতি দেখা যায়। মায়ের দেহ থেকে শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। আয়রন কিংবা জিংক ট্যাবলেট পাওয়া যায় , যা চিকিৎসকের পরামর্শে একজন সন্তানসম্ভবা নারী খেতে পারেন। এছাড়া হরলিক্স পাওয়া যায় গর্ভবতীদের জন্য। আসুন এক নজরে দেখে নিই, উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ মাদার হরলিক্স-

Mother Plus Horlicks - 350g
Mother Plus Horlicks - 350g