ফর্মুলা দুধ তৈরীতে যে ৫ মারাত্মক ভুল এড়িয়ে চলবেন জেনে নিন

আপনার বাচ্চার কি ফর্মুলা দুধ খাওয়ার পর বমি বা ডায়রিয়া হচ্ছে? বারবার ফর্মুলা দুধের ব্র্যান্ড পরিবর্তন করেও লাভ হচ্ছে না? বাচ্চার ওজন বাড়ছে না? পায়খানা কখনো পানির মত পাতলা আবার কখনো কোষ্টকাঠিন্য হয়ে যাচ্ছে? বাচ্চার ফর্মুলা দুধ বানানোর সঠিক ফর্মুলা দুধে গরম পানি নাকি ঠান্ডা পানি দিতে হয়?য়ম জানেন তো? কতটুকু ফর্মুলা দুধে কতটুকু পানি মেশাতে হবে? কিভাবে বাচ্চার জন্য সঠিক উপায়ে তৈরী করবেন? জন্মের পর নবজাতক শালদুধ না পেলে তাকে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহের জন্য এটি খাওয়ানো জরুরি। নবজাতক থেকে শুরু করে বৃদ্ধিরত বাচ্চার জন্য সঠিক পরিমাণে দুধ মেশালেও সঠিকভাবে এটি বানানোর নিয়ম না জানলে তা বাচ্চার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। চলুন তবে জেনে নেই ফর্মুলা দুধ বানানোর সঠিক নিয়ম, সঠিক উপায়ে ফর্মুলা দুধ না বানালে বাচ্চার কি কি ক্ষতি হতে পারে

ফর্মুলা দুধ কত প্রকার হয়ে থাকে?

ফর্মুলা দুধ সাধারণত তিন প্রকার হয়ে থাকে। যথা-

  • পাউডার ফর্মুলা দুধ।
  • লিকুইড ফর্মুলা।
  • রেডি টু ইট ফর্মুলা।

তবে দামে তুলনামুলক কম এবং সহজলভ্য হওয়ার কারণে পাউডার ফর্মুলাই বেশি জনপ্রিয়। এছাড়াও উপাদানের ভিত্তিতে গরুর দুধ সম্বলিত, সয়া সম্বলিত, স্পেশালাইজড, প্রোবায়োটিক উপকারী ব্যাকটেরিয়া সম্বলিত ফর্মুলা দুধ পাওয়া যায়।

বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ তৈরীর সঠিক নিয়ম কি?

বাচ্চাদের দুধের পরিমাণ সঠিক স্কুপ পরিমাণে নিলেও তাতে দুধ বেশি ঘন কিংবা বেশি পাতলা হলে সেটা বাচ্চার ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই বাচ্চার সঠিক দুধ তৈরী করার ক্ষেত্রে কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে চলুন জেনে নেইঃ

  • উষ্ণ গরম পানিতে দুধ মিশিয়ে তৈরী করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পানি বোতলে আগে নিয়ে তারপর দুধ যোগ করতে হবে।
  • বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে ফিডার বোতল, পানির বোতল, ফিডারের নিপল, চামচ সবকিছু ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
  • দুধ ও পানির পরিমান ১ঃ১.৫ হলে ভালো হয়। সেক্ষেত্রে দেড় কাপ পানিতে এক কাপ দুধ মেশাতে হবে।
  • বাচ্চা খাওয়ার পর সেই দুধ ২ ঘন্টার মধ্যেই খাওয়াতে হবে , দুই ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সেই দুধ ফেলে নতুন করে দুধ তৈরী করতে হবে।
  • জমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে একই বোতল দিয়ে দুইজনকে দুধ না খাইয়ে দুইজনের জন্য দুটি ভিন্ন বোতল ব্যবহার করুন।
  • বাচ্চার মুখের আকার অনুযায়ী ও বয়স অনুযায়ী ফিডার বোতল ও নিপল বাছাই করুন।
ফর্মুলা দুধ তৈরীতে যে ৫ টি মারাত্মক ভুল এড়িয়ে চলবেন

ফর্মুলা দুধ তৈরীতে যে ৫ টি মারাত্মক ভুল এড়িয়ে চলবেন জেনে নিন

  • অপরিষ্কার বোতল ও পাত্রে দুধ তৈরী: ভাবছেন বোতল ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার হয়ে গেলো? তাড়াহুড়ো করে দুধ বানাতে গিয়ে বোতল ও দুধ তৈরীর পাত্র এবং ফিডারের নিপল গরম পানিতে জীবাণুমুক্ত করে নিতে অনেকেই ভুলে যান।
  • ছোট বা বড় নিপল বাছাই: বাচ্চার মুখের আকার অনুযায়ী ফিডার বোতলের নিপল বাছাই করতে হবে। মুখের আকারের তুলনায় নিপল ছোট হলে বাচ্চা সেটা দিয়ে খেতে চাইবে না আবার নিপল বড় হলে বাচ্চার খেতে অসুবিধা হবে এমনকি ব্যাথাও হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পানি মেশানো: এটি  কখনোই অতিরিক্ত ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে তৈরী করা যাবে না। পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে তা উষ্ণ গরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
  • দীর্ঘসময় একই দুধ খাওয়ানো: ২ ঘন্টার চেয়ে বেশি রেখে দেয়া ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে তা বাচ্চার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
  • অতিরিক্ত ঘন বা পাতলা দুধ খাওয়ানো: দুধ এবং পানির অনুপাত ১ঃ১.৫ হতে হবে। অতিরিক্ত ঘন বা পাতলা হলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

বাচ্চার খিদে পেয়েছে বুঝবেন কিভাবে?

বাচ্চা যদি নিজের হাত বারবার মুখে দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করে কিংবা বুকের কাছে মুখ ঘষতে থাকে অথবা হা করে এদিক ওদিক তাকায় আর সেটা যদি খাবার খাওয়ানোর অনেকক্ষণ পর হয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন বাচ্চার খিদে পেয়েছে। বাচ্চা যতটুকু খেতে চায় ততটুকুই খাওয়ান। খাওয়া শেষ হলে সে নিজে থেকেই মুখ সরিয়ে নিতে চাইবে।

বাচ্চা ফর্মুলা দুধ সঠিক পরিমাণে পাচ্ছে কিনা তা কিভাবে বুঝবেন?

  • বাচ্চা হাসিখুশি ও উৎফুল্ল থাকবে।
  • বাচ্চার পায়খানা স্বাভাবিক থাকবে।
  • শিশুটি প্রতি ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৬ বার প্রস্রাব করবে।
  • বাচ্চার নড়াচড়া স্বাভাবিক থাকবে।
  • শিশুর বয়স অনুযায়ী ওজন স্বাভাবিক থাকবে।

শিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টি মেটাতে ও শিশুর সুস্থতা বজায় রাখতে ফর্মুলা দুধ বানানোর নিয়ম সঠিক হওয়া আবশ্যক। যেকোনো ফর্মুলা দুধ কেনার ও খাওয়ানোর আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ শিশু ডাক্তার বা পেডিয়াট্রিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না। শিশুর সুস্থতায় এক বিন্দু ছাড় নয়।