বর্ষাকাল মানেই “আজই ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে” রবীন্দ্র সঙ্গীত। ডালে ডালে ফুটে কদম, কেয়া, বেলী। বর্ষাকাল মানেই জম্পেশ খাওয়া দাওয়া, খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা। বৃষ্টির দিনে চায়ের কাপে গল্প জমে বেশ । বর্ষা হয়তো আপনার পছন্দের ঋতু, কিন্তু এ মৌসুমের বৃষ্টির পানি আপনার চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বর্ষাকালে হুটহাট বৃষ্টিতে চুল ভিজে যায় যখন তখন। এছাড়া বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে বেশি যা আপনার চুলের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বর্ষাকালে অযত্নে চুল হয়ে যায় নিষ্প্রাণ, নিস্তেজ। এসময় চুলের যত্ন নিতে হয় আলাদাভাবে। আসুন তবে জেনে নিই , বর্ষাকালে চুলের যত্ন যেভাবে নিবেন সে সম্পর্কে।
বৃষ্টির পানি চুলের জন্য কতোটা ভালো?
বর্ষাকালের বৃষ্টির পানি চুলের জন্য মোটেই ভালো নয়। আপাতদৃষ্টিতে বৃষ্টির পানি পরিষ্কার মনে হলেও এতে এসিড মিশে থাকে। ফলে চুলের ক্ষতি হয়। তাই উজ্জ্বল, মসৃণ চুল পেতে চাইলে বৃষ্টির পানি পরিহার করতে হবে।
বর্ষাকাল কেন চুলের জন্য ক্ষতিকর?
- স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া চুলের জন্য ক্ষতিকর।
- মাথার ঘাম ঠিকঠাক না শুকানো।
- ভেজা চুল ঠিকমতো না শুকানো।
- ছত্রাকের সংক্রমণ।
- চুলের গোড়ায় ইনফেকশন, খুশকি, চুল পড়াসহ নানা ধরনের ছত্রাকের আক্রমণসংক্রান্ত সমস্যা।
- এ সময় মাথার ত্বকের তৈলাক্ততা বেড়ে যায়।

বর্ষাকালে চুলের যত্ন কিভাবে নিবেন?
অনেকের ধারণা বর্ষাকালে ধুলাবালু কম থাকে। এজন্য চুলের সমস্যা কম হবে। কিন্তু ব্যাপারটা তেমন নয়। অন্যান্য ঋতুতে যা চুল পড়ে, বর্ষাকালে তার দ্বিগুণ চুল পড়ে। যেমন খুশকি, চুলের উজ্জ্বলতা কমে যায় ও উকুনও বেড়ে যায়। এই সময় মাথার ত্বক তৈলাক্ত থাকে। চুল সহজে শুকাতে পারে না। তাই চুলের গোড়া থাকে নরম। চুলের সঠিক যত্নের অভাবে এ সমস্যাগুলো আরও বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালে চুলের যত্ন কিভাবে নিবেন
চুল পরিষ্কার রাখুন
আর্দ্রতার কারণে চুলে অতিরিক্ত তেল, ঘাম বা ময়লা জমে। যা দূর করতে শ্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত চুল পরিষ্কার করুন।
সপ্তাহে তিন বার শ্যাম্পু করুন
নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে চুল ধুয়ে ফেলা উচিত। আমরা প্রতিদিন বা একদিন পরপর শ্যাম্পু নয়। সপ্তাহে অন্তত তিনবার চুলে শ্যাম্পু করার অভ্যেস করে নিন। এমন শ্যাম্পু কন্ডিশনার ব্যবহার করুন যা আপনার চুলের ধরনের সঙ্গে মানানসই।
এন্টি ব্যাকটেরিয়াল শ্যাম্পু
বর্ষাকালে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। তাই চুলের জন্য বেছে নিন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল শ্যাম্পু। টি ট্রি অয়েল বা মেন্থল যুক্ত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল শ্যাম্পু স্ক্যাল্পকে গভীর থেকে পরিষ্কার করে। তেলময়লা মুক্ত রাখে, একই সঙ্গে সংক্রমণও রুখে দেয়।
কন্ডিশনার
শ্যাম্পু করার পরে, চুলকে ময়েশ্চারাইজ রাখতে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এরপর কিছুক্ষণ রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
স্টাইলিং করা বন্ধ রাখুন
এই সিজনে চুল পড়া কমাতে চুলে যে কোন স্টাইলিং করা বন্ধ রাখুন। এই সময়টাতে খুব সহজে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে। তাই চুলে যে কোন কেমিক্যাল প্রোডাক্ট বা হিট সহ্য করার ক্ষমতা কম থাকে।
হিট স্টাইলিং কম করুন
অতিরিক্ত তাপ স্টাইলিং চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার এবং কার্লিং আয়রনের মতো তাপ-ভিত্তিক সরঞ্জামগুলোর ব্যবহার কম করার চেষ্টা করুন। এগুলোর পরিবর্তে, আপনার চুল বাতাসে শুকিয়ে নিন।
চুল বেঁধে রাখুন
বর্ষাকালে চুল খোপা বা পনিটেল করে বেঁধে রাখুন। এতে চুল বৃষ্টিতে ভিজবে না। চুলে কম জট পাকাবে। তাই চুল বেধে রাখলে সহজে পরিচালনা করা যাবে।
অ্যান্টি-ফ্রিজ পণ্য ব্যবহার করুন
আর্দ্র আবহাওয়ায় সিরাম, স্প্রে বা ক্রিমের মতো অ্যান্টি-ফ্রিজ পণ্যগুলো ব্যবহার করুন। এতে চুল থাকবে সিল্কি।
চুলকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করুন
বৃষ্টির সংস্পর্শে আসলে চুলকে অতিরিক্ত ভিজে যাওয়া থেকে রক্ষা করুন। এ সময় টুপি, ছাতা বা রেইনকোট ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করুন। এতে আপনার চুল ভিজে যাবে না।

সঠিক খাদ্যাভাস
কোনো ধরনের জাঙ্ক ফুড/ অয়েলি ফুড খাওয়া যাবেনা। বেশি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। আমলা বেঁটে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পরিষ্কার পানি ছেঁকে পান করতে পারলে চুলের গোঁড়া মজবুত হবে। ফল এবং কাঁচা সবজির সালাদ বেশি করে খেতে পারলে চুলের গ্রোথ ভালো হবে। সর্বশেষ পানি পান করুন যত বেশি সম্ভব হয় তত।
আসুন এইবার দেখে নিই বর্ষাকালে ব্যবহার উপযোগী কয়েকটি শ্যাম্পু-