জন্মের পরপরই শিশুরা পরিবারের মধ্যমণি হয়ে উঠে। সবাই তৎপর থাকে শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য। শিশুর খাওয়া, ঘুম, গোসল, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মা-বাবারা চিন্তায় থাকেন। শিশুদের ত্বক সংবেদনশীল। শিশুদের ত্বকের স্তরগুলো বড়দের মতো সুগঠিত নয়। এজন্য শিশুদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হয়। গোসল, প্রতিদিনকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেউ কেউ গোসলের পানিতে দু-এক ফোঁটা ডেটল বা স্যাভলন ছেড়ে দেন। উদ্দেশ্য, শিশুকে জীবাণুমুক্ত রাখা। পরিষ্কার গোসলের জন্য পানিতে অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিলে শিশুর ত্বকের ক্ষতি হয়। বাচ্চাদের গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা যাবে কিনা? শিশুর বয়স কত হলে সাবান দিয়ে গোসল করাবেন? জেনে নেওয়া যাক শিশুকে গোসল করানোর সঠিক নিয়মকানুন।

নবজাতক এবং শিশুর গোসল করানোর নিয়মকানুন
নবজাতকের গোসল করাতে হয় খুব সাবধানে। চাই বাড়তি সতর্কতা। কেবল নবজাতকই নয়, ঘাড় শক্ত না হওয়া পর্যন্ত সব শিশুর জন্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। আসুন এখন জেনে নিই নবজাতক এবং শিশুর গোসল করানোর নিয়মকানুন –
- আবহাওয়া যেমনই হোক, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করান।
- কলের পানি একটু গরম করে নিলেই কিন্তু হবে না।
- চুলায় পানি ফুটে ওঠার পর উচ্চ তাপে আরও ২০ মিনিট রাখলে তবেই পানি নিরাপদ।
- এই পানি ঠান্ডা হয়ে কুসুম গরম তাপমাত্রায় নেমে এলে শিশুকে গোসল করাতে হবে।
- ফোটানো বা ফিল্টারে পরিশোধিত নিরাপদ খাওয়ার পানি ব্যবহার করা যাবে।
- অল্প পরিমাণ খাওয়ার পানি গরম করে সঙ্গে স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাওয়ার পানি মিশিয়ে নিতে পারেন।
- নিজের কনুই ডুবিয়ে পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন।
- গোসলের পানিতে জীবাণুনাশক দ্রবণ মেশাবেন না।
- ঠান্ডা হাওয়ায়, উন্মুক্ত স্থানে গোসল করানো থেকে বিরত থাকুন।
- পরিষ্কার, উষ্ণ স্থান বেছে নিন।
- যিনি গোসল করাবেন, তাঁর হাতের নখ বড় রাখা যাবে না।
- গোসল করানোর আগে হাতের অলংকারাদি খুলে রাখুন।
- হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ও নখের নিচের অংশ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- গোসলের আগে প্রয়োজনীয় সব গুছিয়ে নিন।
- পানির পাত্র আর তোয়ালে চাই দুটি করে।
- চাইলে গোসলের আগে বেবি অয়েল মালিশ করতে পারেন মিনিট দুয়েক।
- কোনোমতেই কাপড় খুলে রোদে শুইয়ে রাখা যাবে না।
- সরাসরি সাবান-শ্যাম্পু প্রয়োগ করা যাবে না।
- নিজের হাতে ফেনা তুলে নিন, সেই ফেনা প্রয়োগ করুন শিশুকে পরিষ্কার করতে।

বাচ্চাদের গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা যাবে কিনা?
গোসলের সময় ঠিক কী কী ব্যবহার করা যায়, এই বিষয়ে সবাই চিন্তিত থাকে। বাচ্চাদের গোসল নিয়ে অনেকের বিভিন্ন রকম জিজ্ঞাসা থাকে। সাবান দেওয়া যাবে কিনা, শাওয়ার জেল দিয়ে গোসল করানো যাবে কিনা ইত্যাদি। আবার অনেকেই জানতে চান কত বছর কিংবা কত মাস থেকে সাবান ব্যবহার করা যাবে? আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক-
- নবজাতককে সরাসরি সাবান লাগানো যাবে না।
- গোসলের সময় বাচ্চাদের উপযোগী হালকা কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
- যে সাবানগুলি জন্মের পর থেকেই ব্যবহারযোগ্য, সেগুলো ব্যবহার করুন।
- শিশুর বয়স ছয় মাস হলে সরাসসরি সাবান লাগানো যাবে।
- গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করুন।
- গোসলের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে।
- জন্মের প্রথম ৪৮ ঘণ্টা শিশুকে গোসল করানো যাবে না।
- এর পর থেকে নিয়মমাফিক গোসল করাতে হবে।
- শিশুর ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থাকলে অনেকে গোসল এড়িয়ে যেতে চান, যা ঠিক নয়।
- এক দিন পরপর শিশুদের উপযোগী সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
- ১২ বছর বয়সের আগে কন্ডিশনার প্রয়োগ করা উচিত নয়।
আসুন একনজরে দেখে নিই বাচ্চাদের গোসলের জন্য ভালোমানের কিছু সাবান-

গোসলের পর কী করণীয়?
গোসল করালেই কাজ শেষ হইয়ে যায় না। গোসলের পরেও কিছু সর্তকতা জরুরি। শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাই গোসলের পরে কিছু ব্যাপারে নজর দিতে হয়। আসুন জেনে নিই, গোসলের পর আপনার করণীয় কী-
- গোসলের পরপরই শিশুর মাথা ও শরীর ভালোভাবে মুছে ফেলুন।
- শিশুকে ভেজা অবস্থায় রাখবেন না।
- ১৫ দিনের বেশি বয়সী শিশুদের আলতোভাবে শরীর মুছিয়ে দিয়ে লোশন লাগাতে হবে।
- ১৫ দিন বয়স হওয়ার আগে কোনো ধরনের তেল, লোশন বা পাউডার ব্যবহার করা উচিত নয়।