বিড়াল এমন একটি প্রাণী যাকে না ভালোবাসে আপনি থাকতে পারবেন না। বিড়ালের কার্যক্রম আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এজন্য নাগরিক জীবনে বিড়াল পোষার একটা ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মানবিক দিক বিবেচনায় শান্তিতে বসবাস করতে চান। এরাই পোষ্য হিসেবে বিভিন্ন জাতের বিড়াল পালেন। বাসাবাড়িতে পোষ্য হিসেবে বিড়ালের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ব্যাপারটা সুন্দর। বিড়ালের সাথে সহজেই বন্ধুত্ব করা যায়। সখ্যতা গড়ে উঠলে বেশ কোয়ালিটি সময় কাটানো যায়। “মার্জার” গল্পটি পড়ে থাকলে বুঝবেন বিড়াল কতো বন্ধুবৎসল। আপনি কি আদুরে, দুষ্টু এ প্রাণীর আচরণ দেখে তার মনের ভাব বোঝেন? কজনই–বা পারেন বিড়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে? রাজধানীর মিরপুরবাসী নাফিসা নুসরাত পারেন। তাঁর ঘরে আছে ১৩টি বিড়াল। অনেক এনিম্যাল লাভারের মতে, বিড়ালের শরীরের নড়াচড়া, চোখের আচরণ ও কিছু আওয়াজে বোঝা যায়, বিড়াল কী চায়। আসুন এবার জেনে নিই, বিড়ালের আচরণ দিয়ে তার মনের ভেতরের খবর যেভাবে বুঝবেন। শিখে নিন বিড়ালের ভাষার আদ্যপান্ত।
বিড়ালের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝে নিন বিড়ালের ভাষা
বিড়াল পরিস্থিতি অনুযায়ী রিয়াক্ট করে। আসুন জেনে নিই বিড়াল তার অঙ্গভঙ্গী, আচরণ দিয়ে কী বুঝাতে চায়-
লেজ নাড়ানো
লেজ নাড়ানো মানে বিড়ালের তখন ‘মুড ভালো’। লেজ নাড়ানোর সময় তাকিয়ে থাকলে বুঝবেন সে খেলতে চায়। আপনার মনোযোগ চায়। সময় চায়। সময় না দিলে সে আপনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়াবে।
মানুষের আশপাশে ঘুরঘুর করা
বিড়াল বিভিন্ন উপায়ে নিজের ভাবভঙ্গী প্রকাশ করে। আমরা প্রায়ই তাদের ইতিবাচক প্রকাশভঙ্গি খেয়াল করি না। একটি বিড়াল একই ঘরে থাকতে আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আপনার কোলজুড়ে বিড়ালের বসে থাকা ওর আরাম উপভোগের লক্ষণ।
ঘ্রাণ নেওয়া
ঘ্রাণ নেওয়া বিড়ালের সহজাত গুণ। বিড়াল আপনার শরীরের ঘ্রাণ নিলে বা কোনো বস্তুর ওপর মাথা ঘষলে বুঝে নিন এটি তাদের ভালোবাসার প্রকাশ। বিড়াল এভাবে গন্ধ ছড়িয়ে নিজের প্রিয় অঞ্চল চিহ্নিত করে থাকে। বিড়াল চেটে বা বিভিন্ন জায়গায় আঁচড় কেটেও এটি করতে পারে।
দলিত মথিত করা
বিড়ালকে নরম বস্তু যেমন কম্বল বা চাদরকে দলিত মথিত করতে দেখা যায়। এটি বিড়ালের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। প্রশান্তি, ভালোবাসার মধ্যে থাকা বিড়াল এ কাজটি করে থাকে। এটি হলো ঘনিষ্ঠতা প্রকাশের একটি ভাষা।’
সোজা লেজ
বিড়ালের লেজও তার খুশির একটি চিহ্ন। হতে পারে।একটি বিড়াল আপনার কাছে এসে লেজ সোজা করে রাখলে বা শেষের দিকটি সামান্য বাঁকানো থাকলে ধরে নিতে পারেন, এটি তার ভালোবাসা প্রকাশের চিহ্ন।’
চোখ দেখে বুঝুন ভালোবাসা
বিড়ালের আরও একটি ইতিবাচক আচরণ হলো, চোখে ধীর পলক। খোলা চোখ, ধীরে পলক ফেলা একটি বিড়াল মানেই সে সুখী ও মানসিকভাবে প্রশান্ত। অথচ পলক না ফেলে সরাসরি তাকিয়ে থাকা বিড়ালকে ভয় পান অনেকে। যখন খেলার মুডে থাকে তখন চোখের পিউপিল প্রসারিত হয়।
শব্দ করা
রাগ বা অস্বস্তি প্রকাশেরও নিজস্ব ধরন রয়েছে বিড়ালের। হিস হিস করা বা গর্জন করার অর্থ একটি বিড়াল কিছু বিষয় নিয়ে অখুশি। বিড়ালের ক্ষুধা লাগলেওসে ম্যাও, ম্যাও শব্দ করে। এছাড়া শিকার করার সময়েও আওয়াজ করে।
গড়গড় শব্দ করা
অনেক সময় বিড়াল একধরনের গড়গড় শব্দ করে। এর মানে হলো সে সন্তুষ্ট। আরামে আছে। আপনাকে বিশ্বাস করছে। এ সময় তাদের বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়।
লিটার বক্সে অনাগ্রহ
লিটার ট্রের বাইরে বিড়ালের টয়লেট করার ঘটনা বিড়ালের অসন্তুষ্টির চিহ্ন। সাধারণ ধারণাটি হলো, লিটার বক্স ব্যবহারের সময় বিড়াল গোপনীয়তা পছন্দ করে। কারো মতে বিড়াল এ সময় তাদের চারপাশটি পরিষ্কার দেখতে চায়। আবৃত লিটার বক্স বিড়ালের একদমই পছন্দ নয়।
আঁচড় কাটা
পোষা বিড়ালের বিরুদ্ধে বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় আঁচড় কাটার অভিযোগ থাকে। বিড়াল অনেক কারণে আঁচড় দেয়। যেমন- উত্তেজনা প্রকাশ, উত্তেজনা কমানো, চাপ প্রশমন, নিজের অঞ্চল চিহ্নিত করতে এরা আঁচড় দিয়ে থাকে।

বাক্সে লুকিয়ে পড়া
বিড়াল বাক্স বা ছোট কোনো জায়গায় ঢুকে থাকতে পছন্দ করে। বাসায় কোনো নতুন বাক্স আনলে বা বাক্স পড়ে থাকলে বিড়ালকে সেটির ভেতরে খুঁজে পাবেন। এ ছাড়া বাসায় নতুন কারও আনাগোনা দেখলে নিজেদের তারা নিরাপদ মনে করে না। তাই ঘরেই লুকিয়ে থাকতে চায়।
ঝাঁকুনি দেওয়া
ঘুম থেকে ওঠার কিছুক্ষণ পর রেশ কাটানোর জন্য অনেক বিড়াল ঝাঁকুনি দেয়। আমরা যেমন আড়মোড়া ভাঙি আর কি! তবে যখন ভয় পায় কিংবা অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে, তখনো তারা ঝাঁকুনি দেয়।
একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকা
কোনো কিছু দেখে ভয় পেলে বিড়াল সেটার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে বাসায় নতুন কাউকে দেখলে তাঁর দিকে শান্তভাবে তাকায় । আর নতুন মানুষটি হুট করে বিড়ালটিকে আদর করতে চাইলে পালিয়ে যাবে।

মা বিড়ালদের কিছু আচরণ
যখন মা বিড়াল বাচ্চা দেয় তখন সেই বাচ্চার আশপাশে কাউকে সে যেতে দেয় না। এ সময় তারা কামড় দেয় বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করে।