আপনার বাচ্চা পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না? শাকসবজি, ছোট মাছ খেতে চায় না? খাবারে অরুচি? পড়তে বসলে ঝিমিয়ে পড়ে? সুস্থ সবল স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু হরলিক্স দরকার? পুষ্টিগুণ সম্পর্কে না জেনেই, অন্যের দেখাদেখি আপনার বাচ্চাকে হরলিক্স খাওয়াচ্ছেন? হরলিক্স খেলে আসলেই কি বুদ্ধি বাড়ে? ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়, স্বাস্থ্যই সম্পদ। সুস্থ-সবল স্বাস্থ্য সকলেরই কাম্য। সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস জরুরি। প্রতিনিয়ত আমাদের শক্তি নির্গত হয়। কর্মক্ষম থাকার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহন করতে হবে। দেহের প্রয়োজনীয় ছয়টি উপাদানের মধ্যে ভিটামিন অন্যতম। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহন করতে হয়। ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের উৎপাতে সঠিক ক্যালরি পাওয়া দুষ্কর। এজন্যই ভিতামিন কিংবা ক্যালরির ঘাটতি পূরণে দরকার হয় হরলিক্স এর মতো সাপ্লিমেন্ট। আসুন তবে জেনে নিই, প্রতিদিন মানুষের কতটুকু ক্যালরির দরকার? সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণে হরলিক্স কতটুকু ভূমিকা রাখে? হরলিক্স কি আসলেই উপকারী? হরলিক্সের উপকারিতা কী? দৈনিক কতটুকু হরলিক্স প্রয়োজন?

প্রতিদিন মানুষের কতটুকু ক্যালরি দরকার?
আমাদের যত বয়স বাড়তে থাকে ক্যালরির প্রয়োজন তত কমতে থাকে। কারণ, বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের মেটাবলিজম কমে।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীঃ ১৬০০-২৪০০ ক্যালরি
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষঃ ২০০০-৩০০০ ক্যালরি
- শিশুঃ প্রায় ১০০০ ক্যালরি
- ১৬-১৮ বছর বয়সীঃ ৩২০০ ক্যালরি
- ১৯-২৫ বছর বয়সীঃ ২০০০-২২০০ ক্যালরি
ক্যালরির এই পরিমাণ ব্যক্তিভেদে শারীরিক শারীরিক কাঠামো, ওজন, উচ্চতা, জীবনযাপনের ধরন, পরিশ্রমের পরিমাণ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। একজন কর্মক্ষম পুরুষের তার প্রতি কেজি ওজনের জন্য অন্তত ২৫ থেকে ৩০ ক্যালরি দরকার হয়।
হরলিক্স কী এবং কেন?
“বেড়ে উঠার ডোজ
রোজ রোজ”
হরলিক্সের এই ট্যাগলাইনটি খুবই জনপ্রিয়। সারা বিশ্বেই সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণে সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে বাড়তি পুষ্টির জন্য হরলিক্স খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। প্রতিটি পরীক্ষার্থী বাড়ির র্যাকে হরলিক্স থাকেই। ক্লাস ওয়ানের বাচ্চা থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারীর জন্যও রয়েছে বিশেষ ধরনের হরলিক্স। হরলিক্স এমনই একটি সাপ্লিমেন্ট যা পাউডার দুধ, গম এবং বার্লির সংমিশ্রণে তৈরি। এতে ভিটামিন এবং মিনারেলও রয়েছে। হরলিক্স প্রস্তুতকারি কোম্পানি হচ্ছে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন (GlaxoSmithKline(GSK))। হরলিক্সের বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ২গ্লাস হরলিক্স= ৬৬৬ গ্রাম ইলিশ মাছে বিদ্যমান আয়রন। দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব পূরণের জন্যই মূলত হরলিক্স খাওয়া হয়। বাজারে কয়েক ধরনের হরলিক্স পাওয়া যায়-
১। জুনিয়র হরলিক্স।
২। এডাল্ট হরলিক্স।
৩। মাদার হরলিক্স।

হরলিক্স এর উপকারিতাঃ
আপনার বাচ্চাকে কেন হরলিক্স খাওয়ান? এই প্রশ্ন করলে অনেকেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। কারণ হরলিক্সে কী কী উপাদান রয়েছে, তাদের কাজই বা কী এ সম্পর্কে আপনি খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেন নি। আসুন হরলিকক্সের উপাদানের সাপেক্ষে উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই,
- হরলিক্স হলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ সহ অত্যাবশ্যক পুষ্টির সুষম মিশ্রণ ।
- হরলিক্সে থাকে বার্লি, শুকনো দুধ, চিনি এবং ভেজিটেবল ফ্ল্যাট।
- ডিএইচএ (ডোকোসাহেক্সাইনয়িক অ্যাসিড) এবং কোলিন রয়েছে।
- কোলিন মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
- জুনিয়র হরলিক্স ক্রমবর্ধমান শিশুদের বিকাশে সহায়তা করে।
- ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের অভাব পূরণ করে।
- দরকারি ক্যালরির ঘাটতি পূরণ করে।
- বাচ্চার বিকাশ ত্বরান্বিত করে।
- শরীরের হাড়ের গঠন মজবুত করে।
- রোগা পাতলা শরীরে শক্তি যোগায়।
- দুর্বল ও রোগা শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়।
- অল্পতে যারা হাঁপিয়ে যায় তাঁদের জন্য উপকারী।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করে।
- খাওয়ার প্রতি রুচি বাড়ায়।
- হজমে সাহায্য করে।
- মাংস পেশীর বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- সহজপাচ্য এবং সহজেই তৈরি করা যায়।

দৈনিক কতটুকু হরলিক্স?
হরলিক্সে ৯ টি পুষ্টি উপাদান রয়েছে (Vit B6, B12, C, D, কপার, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক) যা আপনার একাগ্রতা বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করে। প্রতিদিন ১/২ বারে ১/২ গ্লাস হরলিকস খাওয়াই যথেষ্ট ।
- হরলিক্স খালি কিংবা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে খাবেন না।
- গরম পানি কিংবা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খান।
- এক গ্লাস গরম দুধ কিংবা পানিতে দুই চামচ হরলিক্স মিশিয়ে নিন।
- ২০০ মিলি। গরম দুধ কিংবা পানি নিন। এবার ৩ টেবিল চামচ (২৫ গ্রাম) হরলিক্স মেশান।
- দিনে দুইবার খাওয়া যেতে পারে।
আসুন, এখন একনজরে দেখে নিই সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণে কোন হরলিক্স কার্যকরী:
আপনি যদি নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান তাহলে হরলিক্স জাতীয় খাবারের কোন প্রয়োজন নেই। বেশি করে দুধ, ডিম শাক, সব্জি আর দেশি ফল খান, প্রচুর পানি পান করুন।