শিশু আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। আপনার শিশু কি পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না? শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে গেলে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে? সারাদিন ঘুমানোর কারণে শিশু বুকের দুধ পর্যাপ্ত খেতে পারছে না? আপনার কি বুকের দুধ পর্যাপ্ত তৈরী হচ্ছে না? পাম্প করে দুধ বের করেও পর্যাপ্ত বুকের দুধ বের করতে পারছেন না? ভূমিষ্টের পরপরই শিশু মায়ের বুকের যে দুধ পান করে তাকে বলা হয় শালদুধ। শিশুর পুষ্টি ও বিকাশে শালদুধের বিকল্প কিছুই নেই। কিন্ত অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমানে পাচ্ছে না কিংবা জন্মের ৩-৪ দিন পর বুকের দুধ পেলেও তা পরিমানে খুবই কম। সেক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প খুজে বের করার পাশাপাশি মায়ের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার উপায় খুজে বের করতে হবে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক শালদুধ কি? শালদুধ পর্যাপ্ত না পেলে কি করতে হবে? শিশুর জন্য বিকল্প দুধ বাছাই করতে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে? মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির কৌশল এসব বিষয়ে বিস্তারিত।
শালদুধ কি?
শিশু ভূমিষ্টের পরপরই মায়ের বুকের যে দুধ পান করে তাকেই শালদুধ বলা হয়। শিশুর পুষ্টি ও বিকাশে মায়ের দুধের বিকল্প কিছুই নেই। শিশু ভূমিষ্টের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই তার পুষ্টি যোগাতে যথেষ্ট। শালদুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি পাওয়া যায় এবং সেই সাথে শালদুধে মায়ের এক ধরনের হরমোন মিশ্রিত থাকে যা শিশুর জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
শিশু পর্যাপ্ত দুধ না পেলে কি করনীয়?
শিশু মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে না পেলে শিশু অপুষ্টি এবনফ পানিশূন্যতার শিকার হতে পারে। যার ফলে শিশুর ওজন কমে যাওয়াসহ শিশু বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই কিন্ত কোনো কারণে শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ না পায় সেক্ষেত্রে নবজাতকের পুষ্টি নিশ্চিত করতে বেছে নিতে হবে ইনফ্যান্ট ফর্মুলাসমৃদ্ধ বাচ্চাদের গুড়ো দুধ যেগুলোতে নবজাতকের উপযোগী হাফ ক্রিম মিল্ক থাকে। এক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার ওজন ও চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে দুধ বাছাই করে নিতে হবে।
মায়ের বুকের দুধ কি কি কারণে কম উৎপাদন হয়ে থাকে?
- সঠিক পজিশনে সঠিকভাবে দুধ না খাওয়ালে।
- শিশুর মুখ বারবার বুকে না লাগালে।
- পানি কম খেলে।
- পর্যাপ্ত খাবার, ফল ও শাকসবজি না খেলে।
- মায়ের মন খারাপ বা অশান্তিতে থাকলে।
- পাম্প করে বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করলে।
- মায়ের মানসিক সমস্যা থাকলে।
- মায়ের নিপলে সমস্যা থাকলে।
- হরমোনজনিত কারণে।

কিভাবে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করা সম্ভব?
- প্রচুর পরিমানে তরল খাবার খেতে হবে।
- দৈনিক ৬-৮ গ্লাস পানি খেতে হবে।
- সঠিক পরিমানে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
- মাকে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নিতে হবে।
- দুধ খাওয়ানোর আগে এক গ্লাস পানি খেতে হবে।
- দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য লাউ এবং কালোজিরা বেশি পরিমানে খেতে হবে।
- দিনে কমপক্ষে ৮-১২ বার দুধ খাওয়াতে হবে।
- বারবার বাচ্চার মুখে দুধ খাওয়ানোর জন্য নিপল কালো অংশসহ বাচ্চার মুখে দিতে হবে।
- ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
- পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে দেয়া যাবে না।
- দুই স্তন থেকে সমপরিমানে খাওয়াতে হবে।
- মন ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।
- ৪৫° এঙ্গেলে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
শিশুর বিকল্প দুধ বাছাই করতে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
- ইনফ্যান্ট ফর্মুলা কিনা।
- বাচ্চার ওজন ও বয়সের সাথে মানানসই কিনা।
- DHA ও প্রোটিন আছে কিনা।
- পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আছে কিনা।
- ক্যালসিয়াম আছে কিনা।
- সহজেই বাচ্চা পরিপাক করতে পারবে কিনা।
বাচ্চার জন্য বিকল্প দুধ বাছাই করতে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিকল্প দুধ খাওয়ানো যাবে না।
- পরিমানের চাইতে বেশি বা কম পানি মেশানো যাবে না।
- নির্দেশিত পরিমানের চাইতে বেশি খাওয়ানো যাবে না।
- দুধে থাকা কোনো উপাদানে আপনার বাচ্চার এলার্জি আছে কিনা জেনে তারপর কিনুন।
- দুধের উপাদানগুলো দেখে ও আসল কিনা যাচাই করতে হবে।
- নকল ও কমদামী পণ্য এড়িয়ে চলুন।
- বাচ্চার কোনো অসুবিধা লক্ষ্য করতে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।